Fakir Shah

সাকিবের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা

আইনের শাসন বলতে আপনি কি বোঝেন? 

আইনের শাসনের অনেকগুলা দিক আছে, তার মধ্যে একটা হইলো অপরাধীর নিরাপত্তা। একজন মানুষ অনেক অপরাধ করতে পারেন, কিন্তু তার মানি এইনা যে আপনি তাকে জনগণের হাতে তুলে দিবেন গণপিটুনির জন্য গণপিটুনি বিচারের (mob justice) এর জন্য। আপনি তাকে নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে হাজির করবেন। সে চাইলে তার পছন্দ মতো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। বিচারে যদি আদালত উক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে তবে তার জেল জরিমানা হবে।  কিন্তু কোন মোটেই আপনি অন্য একজন মানুষের উপর হামলা করে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না, ওই ব্যক্তি যতই দোষী হোক না কেন। এবং এই পুরো বিষয়টি দেখা রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।   

সাকিব আল হাসান তার শেষ ম্যাচটি দেশে খেলার জন্য আমাদের কর্তাব্যাক্তিদের আবদার  করার পর আমাদের সরকার এবং বিসিবি যেভাবে বিষয়টি সামলালো, তাতে প্রশ্ন জাগে আমাদের কর্তারা আদৌ এই বিষয়গুলা বোঝেন কিনা। 

বিসিবি প্রধান ফারুক বলে দিলেন সাকিবের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি। ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি সাকিবের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর -  দাবি ক্রীড়া উপদেষ্টার। ক্রীড়া উপদেষ্টার পুরো কথা শুনে আমার মনে হয়েছে উনি গণপিটুনি বিচার এ বিশ্বাস করেন। উনার ভাষায় - ‘আমার নিরাপত্তার জন্য পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল আর একজন গানম্যান থাকে। আমার ওপর যদি ১০ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই ৫-৬ জন আমাকে কি নিরাপত্তা দেবে? সে ক্ষেত্রে জনগণের যদি কোথাও ক্ষোভ থাকে, সেটাকে তো আমাকেই কমাতে হবে আমার কথা দিয়ে।’ খুবই ভয়ঙ্কর কথা।  

সাকিব একজন ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, একশো জন মানুষ হত্যা করতে পারেন। কিন্তু দিন শেষে তার ও অধিকার আছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার, একটি সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ আদালতের মাধ্যমে বিচার চাওয়ার। দরকার হলে ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতরে বিশেষ নিরাপত্তায় তার বিচার হবে। কিন্তু জনগণ খেপে আছে এই জন্য একজন ব্যক্তির নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে পারবে না - এইটা কি ধরণের কথা? আর রাষ্ট্র যদি এই নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে কি দরকার এই রাষ্ট্রের?  

বিসিবি প্রধান এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এমন উল্টা পাল্টা মন্তব্য করতে পারেন না।  উনারা আমজনতা নন, পদধারী কর্তাব্যাক্তি। উনাদের কথার আলাদা তাৎপর্য আছে এবং থাকে। উনাদের এই ধরণের বক্তব্য মানুষকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহিত করে।    

উনারা যদি মনে করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাকিবের নিরাপত্তা তারা দিতে পারবেন না, তবে তা নিয়ে  তারা গোপনে সাকিবের সাথে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তারা যে বক্তব্য দিলেন তাতে তাদের মান কমলো এবং বাংলাদেশের জন্য খারাপ হলো।